কামাল হোসেন, বেনাপোলঃশার্শা উপজেলায় ইরি বরো চাষে ব্যাস্ত আছে কৃষকরা। শীত উপক্ষো করে এখন দিন রাত জমিতে সেচ দেয়া, চাষ দেয়া সহ বীজ তলা থেকে চারা উঠানো সহ দারুন ব্যস্ত আছে তারা
মাঠে ব্যাস্ততা দেখে তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদ করে বাম্পার ফলনের মধ্য দিয়ে তারা বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান। এদিকে কয়েকবছর ধরে ধানের ন্যায্য মুল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুকছেন বলে ও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।
বেনাপোলের বড়আঁচড়া গ্রামের আব্দুল হাই, আনোয়ারুল ইসলাম ও মফিজ সরকার বলেন গত দুই বছর যাবত ধানের মুল্য না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে ভুট্রা, আখ,শাক –সবজিসহ অন্যান্য ফসলের দিকে ঝুকে পড়েছেন।
বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী মাঠে সরেজমিনে কৃষকদের সাথে কথা প্রসঙ্গে পুটখালী গ্রামের কৃষক স্বদেশ সরকার, কাশেম আলী, জয়দেব জানায় তারা কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ঘরে তুলতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরছ হয়। আর প্রতি বিঘাতে ধান উৎপাদন হয় ২২ থেকে ২৪ মন। খরছ খরছা বাদ দিয়ে তেমন লাভ থাকে না। কাশেম আলী বলেন আস্তে আস্তে খরছ হয় আর ধান উৎপাদন হলে এক সাথে আসে তাই বাধ্য হয়ে করতে হয়।
বড়আঁচড়া মাঠের কৃষক বেনাপোল ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আব্দুল হাই বলেন, বীজতলা থেকে শুরু করে ধান উৎপাদন করতে আয় ব্যায় প্রায় সমান সমান হয়ে যায়। তিনি বলেন প্রতি বিঘা জমিতে ৬ হাজার টাকার সেচ/ পানি দিতে হয়। জৈব সার বাদে পটাশ ইউরিয়া টিএসপি সার মিলে ৬০ কেজি সার দিতে হয়। এর পর শ্রমিক খরছাতো আছে। তারপর ও ভালভাবে উৎপাদন হলে আমাদের মনে আনন্দ আসে।
শিকড়ি মাঠে কথা হয় কৃষক আব্দুল হামিদের সাথে। তিনি বলেন, মাঘ মাসের মধ্যে সকল জাতের ধান লাগানো শেষ হবে। সাধারনত মিনিকেট, ২৮ জাতের ধান, বাসমতি স্বর্না স্বর্নলতা ধানের চাষবাদ হয়ে থাকে। তিনি জানান তার ২৫ বিঘা জমিতে ধানের চাষ হবে। জমিতে আস্তে আস্তে খরছ লাগে যার জন্য তার তেমন অসুবিধা হয় না। যদি ভাল ভাবে ধান হয় তাহলে যে ফসল উৎপাদন হবে তার ২৫ বিঘা জমিতে তাতে তার ভাল ভাবে চলে যাবে। সাধারনত তিন মাস পর অর্থাৎ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে এ ধান তাদেও ঘরে আসবে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের কোন সাহায্য আসে না বলে তিনি জানান।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার সৌতম কুমার শীল বলেন, এ বছর শার্শা উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষের লক্ষমাত্রা রযেছে। ইতিমধ্যে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির রোপন কাজ শেষ হয়েছে। বাকি গুলো চলছে আশা করি দুই সপ্তাহের ভিতর সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন প্রনোদণা কর্মসুচীতে তারা উপজেলার ৪০০ জন কৃষককে বিভিন্ন প্রকারের ৩০ কেজি করে সার প্রদান করেন। ১২০ জন ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীকে তারা মাঠদিবস ও কৃষক প্রশিক্ষন সহ সার বিতরন করেন। এ ছাড়া তারা চারা লাগানোর পর থেকে মাঠে নিবিড় পর্যবেক্ষন করেন। ধানে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি আক্রমন করলে তা দমনে ভুমিকা রাখে কৃষি অফিস। কৃষকরা যে ধরনের সহযোগিতা চান তা শার্শা কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হয়।
কিভাবে রোপন করতে হবে?
প্রথমে ভালো রুপে কাদা করে অন্তত সাতদিন পর্যান্ত জমিতে পানি আটকিয়ে রাখতে হবে। শেষ চাষের সময় অনুমোতিদ হারে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর জমিতে ছিপ ছিপ পানি থাকা অবস্থায় প্রতি গোছায় ২-৩ টি চারা ২-৩ সেঃমিঃ গভীরতায় গোছা থেকে গোছার দুরত্ব ১৫-২৫ সেঃমিঃ এবং সারির দুরত্ব ১৫- ৩০ সেঃমিঃ দুরত্বে চারা রোপন করতে হবে। নিয়মিত দেখাশোনা ও ঠিকমত রোগ বালাই দমন করতে পারলে ইরি ধান চাষে লাভবান হওয়া যায় বলে কৃষকরা মন্তব্য করেন।
Discussion about this post