জনতার কলামঃ১. রোজার দ্বারা প্রবৃত্তির উপর আকলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয় এবং রূহানী শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছা হ্রাস পায়। এতে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং অন্তর বিগলিত হয় মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতায়।
২. রোজা দ্বারা মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভীতি এবং তাক্ওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়। এ কারণেই আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন, যাতে তোমরা তাক্ওয়ার গুণ অর্জন করতে সক্ষম হও।
৩. রোজার দ্বারা মানুষের স্বভাবে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয় এবং মানব মনে আল্লাহর আজমত ও মহানত্বের ধারণা জাগ্রত হয়।
৪. মানুষের দূরদর্শিতা আরো প্রখর হয়।
৫. রোজার দ্বারা মানব মনে এমন এক নূরানী শক্তি সৃষ্টি হয়, যার দ্বারা মানুষ সৃষ্টির এবং বস্তুর গুঢ় রহস্য সম্বন্ধে অবগত হতে সক্ষম হয়।
৬. রোজার বরকতে মানুষ ফিরিশতা চরিত্রের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে।
৭. রোজার বরকতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হয়। কেননা যে ব্যক্তি কোনোদিনও ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত থাকেনি সে কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের দুঃখ, কষ্ট বুঝতে পারে না। অপর দিকে কোনো ব্যক্তি যখন রোজা রাখে এবং উপবাস থাকে তখন সে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে যে, যারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে, তারা যে কত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আর তখনই অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি তার অন্তরে সহানুভূতির উদ্রেক হয়।
৮. রোজা পালন করা আল্লাহর প্রতি গভীর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন। কেননা কারো প্রতি মহব্বত জন্ম নিলে, তাকে লাভ করার জন্য প্রয়োজনে প্রেমিক পানাহার বর্জন করে এবং সব কিছুকে ভুলে যায়। ঠিক তেমনিভাবে রোজাদার ব্যক্তিও আল্লাহর মহব্বতে দেওয়ানা হয়ে সবকিছু ছেড়ে দেয়। এমনকি পানাহার পর্যন্ত ভুলে যায়। তাই রোজা হলো, আল্লাহর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন।
৯. রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। তাই রোজা মানুষকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হিফাজত করে।
১০. রোজা দ্বারা মানুষের শারীরিক সুস্থতা হাসিল হয়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যেক মানুষের জন্য বছরে কয়েকদিন উপবাস থাকা অাবশ্যক। তাঁদের মতে, স্বল্প খাদ্যগ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
সূফী সাধকদের মতে, হৃদয়ের স্বচ্ছতা হাসিলে স্বল্প খাদ্যগ্রহণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। রোজা দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর কারণে শরীরে চর্বি জমতে পারে না। পক্ষান্তরে মাত্রাতিরিক্ত পানাহারের ফলে শরীরে অধিকাংশ রোগব্যাধি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও রোজার মধ্যে বহু উপকারিতা রয়েছে।
রোজা না রাখার অপকারিতা: রোজা ইসলামের একটি অন্যতম রুকন-ভিত্তি। আলিমগণের সর্বসম্মত মত হলো, রমজানের রোজা ফরজে আইন। যে ব্যক্তি রমজানের রোজা ফরজ হওয়া অস্বীকার করবে সে কাফির। এক হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বিনা ওজরে (কারণে) ইচ্ছাপূর্বক রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করে, অন্য সময়ের সারা জীবনের রোজা তার সমকক্ষ হবে না।
Discussion about this post