মোঃ ফয়সাল ইলাহী ঃআমদানি ছাড়িয়ে গেছে ৫০ লাখ টন চালের বাড়তি দামে গমের ওপর চাপ চালের দাম বাড়তি থাকায় গমের ওপর চাপ বেড়েছে। তাই বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি। গত অর্থবছরে (২০১৬–২০১৭ ) মোট গম আমদানি হয়েছিল ৫৮ লাখ টনের মত। চলতি অর্থবছরে ইতিমধ্যে তা ৫০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চালের পাশাপাশি গমের চাহিদাও প্রায় সমানে সমান। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে , দেশে বর্তমানে গমের চাহিদা বছরে ৪০ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টন। আর এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৪ লাখ টনের মত। তাই চাহিদা মেটাতে ৩০ লাখ টন থেকে ৩৫ লাখ টন আমদানি করতে হয়। গত মওসুমে গম উৎপাদন হয়েছে কম। এ সময়ে উৎপাদিত হয়েছে ১৩ লাখ ১১ হাজার টন। পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে গত বছরে প্রায় ৩৭ হাজার টন কম হয়েছে। খাদ্যশস্য আমদানিকারকরা জানান, গমের বহুমুখী ব্যবহার হওয়ায় দেশে কয়েক বছর ধরে চাহিদা বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যে চালের দাম বাড়তি হওয়ায় চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে গমের ওপর। তাই সরকারি– বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট সূত্রে গত মঙ্গলবার জানা গেছে , গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি খাতে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ৪১ লাখ ৩৮ হাজার টন আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৬টি জাহাজে সাড়ে ৩ লাখ টন গম রয়েছে। আরও একটি জাহাজ ৫৫ হাজার টন গম নিয়ে পৌঁছবে। গত অর্থবছরে সরকারি খাতে ৩ লাখ ৯২ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টন আমদানি হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার টন গম আমদানির ঋণপত্র হয়েছে। এরমধ্যে ৩৪ লাখ টনের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে। গমের আন্তর্জাতিক বাজারও গত বছরের তুলনায় চড়া। গত বছর মার্চের ঠিক এ সময়ে রাশিয়ান গমের এফওবি মূল্য ছিল ১৯২ ডলার প্রতিটন। এ বছরে তা ২০৬ ডলার। ইউক্রেনের গম ছিল প্রতিটন ১৮৯ ডলার। তা বর্তমানে ২০২ ডলার। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গমের এফওবি মূল্য বেড়ে হয়েছে ১৮৭ ডলার। গত বছর মার্চে ছিল ১৭৬ ডলার। গত ২০১৬–১৭ অর্থবছরে দেশে ৫৮ লাখ ২৩ হাজার টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানি করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে ইতিমধ্যে আমদানি হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টন। এরমধ্যে সরকারি খাতে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন এবং বেসরকারি খাতে ৬৬ লাখ ২২ হাজার টন। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারিভাবে চাল আমদানি হচ্ছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। সরকারি খাতে গত অর্থবছরে কোন চাল আমদানি হয়নি। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সরকারি খাতে আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ১৮ হাজার টন। বেসরকারি খাতে আমদানি হয়েছে ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টন, গত বছর আমদানি হয়েছিল ১৩ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে চাল–গম আমদানি বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বাড়তি সমস্যা তৈরি করেছে। অপরদিকে, আমদানির চাপে দাম বেড়ে গেছে ডলারের। হাওরে গত বোরো মৌসুমে ধান তলিয়ে যাওয়ায় উৎপাদন মার খায়। ফলন হ্রাস পায় প্রায় ৯ লাখ টন। দর বাড়তে থাকে চালের। পরিস্থিতি সামাল দিতে চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়।
Discussion about this post