পুনম শাহরীয়ারঃ ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আমাদের মুক্তিসংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ দিনে গাজীপুরবাসী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ প্রতিরোধ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকে ত্বরান্বিত করে এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করেছিল। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোমবার বিকেলে গাজীপুর জেলা শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে ‘স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস ১৯ মার্চ ১৯৭১ উদযাপন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯ মার্চের ঘটনা মূলত তৎকালীন শাসক গোষ্ঠির অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেরই বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরবাসী যে বীরত্ব ও সাহস দেখিয়েছিলেন তা আমাদের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আকস্মিক কোনো ঘটনা নয় বা হঠাৎ করে একদিনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। এর পেছনে রয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ-নির্যাতন আর বঞ্চনার ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের পালা। প্রথমেই শাসকচক্র বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ’৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৭১-এর ২৬ মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান তা আমাদের পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে। খণ্ডিত ইতিহাস কোনো জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে না। রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, আমরা এখন স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশটির জন্ম, সে দেশ আজ সগৌরবে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, জেন্ডার সমতাকরণ, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসকরণসহ বহু বিষয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ অবশ্যই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে শামিল হতে সক্ষম হবে। ‘১৯ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস’ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এবং ওই কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারউজ্জামান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
Discussion about this post