টাঙ্গাইল ব্যুরোঃসারাদেশ ব্যাপী আলোচিত টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ধুবরিয়া ইউনিয়নের ইউসুফ মিয়ার মেঝ ছেল জাহালম (৩২)। দুদকের দেয়া ৩৩টি ভুল মামলার আসামী জাহালম ২৬টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন রোববার ৩-২-১৯ইং। তবে আরও ৭ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়ায় সে বিষয়ে আদেশ দেননি আদালত। হাই কোর্টের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পেয়ে জাহালম সোমবার তার গ্রামের বাড়িতে আসলে পরিবারের লোকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাকে একনজর দেখতে আসে শত শত নারী-পুরুষ ও বিভিন্ন মিডিয়ার ব্যক্তি বর্গ।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, যারা তার জীবন থেকে ৩টি বছর কেড়ে নিয়েছে তাদের যেন সরকার আইনের আওতায় নিয়ে এসে সুষ্ঠু বিচার করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৪টায় জাহালমকে হাজির হতে বলা হয় দুদক অফিসে। চিঠিতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের জালিয়াতির সঙ্গে সে জড়িত। নির্ধারিত দিনে তার বড় ভাই শাহানূর মিয়াকে নিয়ে দুদকের ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন।
দুদক কর্মর্কতারা জাহালমের কাছে জানতে চান, আবু সালেক নাম দিয়ে তিনি সোনালী ব্যাংকে কোনো হিসাব খুলেছেন কিনা? জাহালম দুদক র্কমকর্তাদের জানান, আমি শ্রমিক, অল্প আয়ের মানুষ ও অল্প শিক্ষিত। আমার সোনালী ব্যাংকে কোনো হিসাব বা লেনদেন নাই। অথচ দুদুকে উপস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তারা সবাই জাহালমকেই আবু সালেক বলে শনাক্ত করেন। কারণ দুজন দেখতে প্রায় একই রকম চেহারাযুক্ত । এর দু’বছর পর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জাহালমের খোঁজ-খবর করতে থাকে থানা পুলিশ। পরে গ্রামের বাড়িতে তাকে না পেয়ে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তার কর্মস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিল থেকে তাকে আটক করা হয়।
জাহালম তখন জানতে পারে তার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে ৩৩টি মামলায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক। এভাবেই কারাগারে কেটে যায় আরও দুটি বছর। এ দু’বছরে অনেকবারই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জাহালম বলেছে, ’স্যার, আমি জাহালম, আবু সালেক নই।’
জাহালমের মা মানোয়ারা বেগম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বলেন, ‘আল্লাহ তুমাগো (সাংবাদিক) ভাল করুক। শেখের বেটিরে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) নেক হায়াত দান করুক। আমার ব্যাটা আমার বুকে ফিরে আইছে আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া।’
তিনি আরও বলেন, তবে এই তিন বছরে আমার বেটারে আমি দেহি নাই। যার কারনে আমার বেটা জেল খাটল তার বিচার শেখের বেটি যেন করে, তার যেন জেল অয়। আর আমার যে ক্ষতি অইছে, আমি ঋণী, পাওনাদারগো হাত থিকা আমারে আমার সন্তানগোরে যেন তিনি ( মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) রক্ষা করে, মুক্তি দেয়। আমি তার জন্যে দুয়া করি।
জাহালমের বড় ভাই শাহানূর মিয়া বলেন, ভাই ছাড়া পাইছে আমরা সবাই খুশি। আমার ভাইয়ের কারাগারের তিনটি বছর কেউ ফিরিয়ে দিবো না কিন্তু আমি আমাদের পরিবার যে কারণে আজ পথে বসেছে তার কী হবে? আমার ভাইয়ের থাকার ঘড়টাও নাই, আপনারা দেইখ্যা যান। তিনি সরকারের কাছে ন্যায়বিচার আশা করেন।তিনি আরো বলেন আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, আমাদের পরিবারকে যেন তিনি দেখেন। তিনি থাকতে আমার বৃদ্ধ মা যেন অন্যের বাড়িতে আর ঝিয়ের কাজ করে খেতে না হয়, আমরা এহন নিঃস্ব।
এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যাংকার শুভর হাত রয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষ সুষ্ঠ বিচার দাবী এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পেশাজীবি ব্যক্তি বর্গের।
Discussion about this post