সিলেটের জৈন্তাপুরে আটরশি ও কওমি পণ্হি আলেমদের ওয়াজ
নিয়ে সংঘর্ষে নিহত- ১ ,
আহত শতাধিক জৈন্তাপুরে ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র
করে সোমবার রাত ১১টার দিকে দু’পক্ষের
সংঘর্ষে এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত ও
শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে নিহত মুজ্জাম্মিল হোসেন (২৮)
হরিপুর মাদ্রাসার দাওরা হাদিস
বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও
গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী গ্রামের
বাসিন্দা ।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস
মাওলানা আব্দুস সালামসহ শতাধিক লোক
আহত হয়েছেন। এ ঘটনার জেরে সেখানকার
প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে
চালানো হয়েছে ব্যাপক তান্ডব। পুড়িয়ে
দেয়া হয়েছে এসব এলাকার অন্তত ৪০টি
বাড়ি ঘর। খবর পেয়ে বিজিবি, র্যাব ও
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ২টার দিকে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার
আমবাড়িতে সোমবার সন্ধ্যায় আটরশি
পীরের অনুসারীরা একটি ওয়াজ
মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে
ইসলাম বিরোধী কোন বক্তব্য দেয়া হয়
কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য কওমীপন্থী
স্থানীয় অপর একদল মুসল্লী সেখানে
হাজির হয়। ওয়াজ মাহফিল নিয়ে দু’পক্ষ
লিপ্ত হয় তর্কাতর্কিতে। এক পর্যায়ে রাত
১১টার দিকে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়।
সংঘর্ষে মারা যায় মাদ্রাসা ছাত্র
মুজাম্মিল আলী। মাদ্রাসা ছাত্র মারা
যাবার খবর পেয়ে হরিপুর বাজার
মাদ্রাসা থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র
ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা
ব্যাপক তান্ডব চালায়। এ সময় আমবাড়ি ও
কাঠালবাড়ি এলাকার তিন কিলোমিটার
এলাকার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময়
ভয়ে পুরুষরা বাড়ি ঘর ত্যাগ করে।
মহিলারা কোন রকমে আত্মরক্ষা করেন।
পরিস্থিতি বেগতিক হলে রাত ২টায়
ঘটনাস্থলে বিজিবি তলব করা হয়। সিলেট
থেকে ছুটে যায় র্যাব-৯ এর সদস্যরা। তারা
গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জৈন্তাপুর থানার ওসি খান মোহাম্মদ
ময়নুল জাকির একজনের মৃত্যুর বিষয়টি
নিশ্চিত করেছেন। নিহতের লাশ ময়না
তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল
কলেজ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে
জানান ওসি। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৪০টি
বাড়ি-ঘর পুড়ানো হয়েছে বলে জানান
তিনি।
এদিকে, হরিপুরে মাদ্রাসা ছাত্র নিহত ও
শিক্ষক আহত হওয়ার প্রতিবাদে সোমবার
রাতে শতাধিক মাদ্রাসা ছাত্র সিলেট
নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংঘর্ষের পর একটি
পক্ষের কয়েক হাজার লোক দেশিয়
অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমবাড়ী গ্রামের অর্ধ
শতাধিক ঘর বাড়ীসহ কেন্দ্রি গ্রামে
অবস্থিত জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমানের বাড়ী
পুড়িয়ে দেয়।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে সিলেটের
জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, পুলিশ
সুপার মনিরুজ্জামান, এডিসি জেনারেল
শহিদুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা
পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন,
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার
মৌরীন করিম, সহকারি কমিশনার (ভূমি)
মুনতাসির হাসান পলাশ, জৈন্তাপুর মডেল
থানার অফিসার ইনচার্জ খাঁন মোঃ মঈনুল
জাকির, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)
আনোয়ার জাহিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন
করেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে এলাকার
জনপ্রতিনিধি, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, স্থানীয়
আমবাড়ী জামে মসজিদে সোমবার ওয়াজ
মাহফিলের আয়োজন করে। ওয়াজ
চলাকালে রাত ১০টায় প্রধান অতিথির
বক্তব্য কালে হরিপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস
আব্দুস ছালাম এর সাথে আয়োজকদের কথা
কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে পূর্ব থেকে
অবস্থানে থাকা হরিপুর মাদ্রাসার
অর্ধশত ছাত্র ও শিক্ষক ওয়াজ বন্দের
চেষ্টা চালালে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে
পড়ে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলায়
ঘটনাস্থলেই নিহত হন মাদ্রাসাছাত্র
মুজ্জাম্মিল হোসেন। অপরদিকে ঘটনার
সংবাদ পেয়ে হরিপুর এলাকায় বিভিন্ন
মসজিদে মাইকযোগে ওয়াজে হরিপুর
মাদ্রাসার শিক্ষক সহ ছাত্র নিহত হওয়ার
সংবাদ প্রচার করে সবাইকে সহযোগীতার
আহবান জানানো হয়। তৎক্ষনিক ভাবে
গোটা উপজেলা জুড়ে সংবাদটি ছড়িয়ে
পড়ে।
সংবাদ পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন কৌওমী
মাদ্রাসা সহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা গাড়ী
যোগে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমবাড়ী
এলাকার নিরিহ জনসাধারনের
বসতবাড়ীতে হামলা করে অগ্নি সংযোগ
করে। এতে আমবাড়ী গ্রামের প্রায় ৪০টি
ঘরবাড়ী নিমিষেই অগুনের লেলিহান
শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এছাড়া আহত
হন ছবিলা খাতুন (৬৫), কুলছুমা বেগম (২৬),
ফিরোজা রেগম (৩৫), নাছিমা বেগম (৩৫),
হুসনা বেগম(৪০), মোহাম্মদ আলী(৮০),
মিনারা বেগম (৬০), শফিকুর রহমান (৪০),
সাথী বেগম(১৮), মোঃ আব্দুর রহিম(২৮),
সানা উল¬াহ(৫৮), জেসনা বেগম(৪০),
জাবেদা বেগম (১৫), আনোয়ারা বেগম(৪০),
নাছিমা বেগম(৪০), হাসিনা বেগম(৪০),
রজির আহমদ(৪০), রেকিয়া বেগম (৫০) সহ
শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু।
হামলাকারীরা বাড়ী ফেরার পথে রাত
৩টার দিকে জৈন্তাপুর ইউনিয়নের
চেয়ারম্যান কেন্দ্রি গ্রামের বাসিন্ধা
এখলাছুর রহমানের বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ
করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
ওয়াজ মাহফিলে সংঘর্ষে হরিপুর
মাদ্রাসার আহত ছাত্র-শিক্ষকরা হলেন-
হেমু পাখিটিখি গ্রামের অব্র“ মিয়ার
ছেলে আবুল কালাম (২৩), কানাইঘাট
উপজেলার বড়বন্দ গ্রামের আব্দুর রহমানের
ছেলে এনাম(১৮), জৈন্তাপুর উপজেলার
উপরশ্যামপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের
ছেলে মাছুম(২০), দরবস্ত গর্দনা গ্রামের
মতসিন আলীর ছেলে রুহুল আমিন(২০),
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কামাল বস্তি
গ্রামের বদরুল আলমের ছেলে হোসেইন
আহমদ(১৮), গোয়াইনঘাট উপজেলার
তোয়াক্কুল গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের
ছেলে আলীম উদ্দিন(২৪), সুনামগঞ্জ সদর
উপজেলার রাধানগর গ্রামের আব্দুল
করিমের ছেলে আশরাফ আলী(১৮),
জৈন্তাপুর উপজেলার সেনগ্রামের মুহিবুর
রহমানের ছেলে দেলোয়ার(২২),
গোয়াইনঘাট উপজেলার লহর গ্রামের আখলু
মিয়ার ছেলে শিহাব উদ্দিন(২৩),
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কামালবস্তি
গ্রামের ডাক্তার শফিকুর রহমানের ছেলে
নুরুজ্জামান(২২), জৈন্তাপুর উপজেলার
উপরশ্যামপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে
ফরিদ আহমদ(২৫), সিলেট সদর জালালাবাদ
পাটিনুরা গ্রামের রশিদ আলীর ছেলে
মাসুক আহমদ(২২), কোম্পানীগঞ্জ
উপজেলার মৃত সিকন্দর আলীর ছেলে আব্দুল
বাছিত(২৫), জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর
উৎলার পার গ্রামের আব্দুর রবের ছেলে
মাসুক আহমদ(৪০), জৈন্তাপুর উপজেলার
হেমু হাউদপাড়া গ্রামের ইমাম উদ্দিনের
ছেলে বিলাল আহমদ(৩৪), কানাইঘাট
উপজেলার কাজির পাতন গ্রামের মাহমুদ
আলীর ছেলে আরিফ আহমদ(২১), জৈন্তাপুর
উপজেল।প্রেস মিজানুর রহমান ফেসবুক ওয়াল
Discussion about this post