অন্তর আহম্মেদ নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) আসনের থেকে তিনবার নির্বাচিত জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তি সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তাকে খাদ্যমন্ত্রী করায় শেখ হাসিনা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন নওগাঁবাসি ও আওয়ামীলীগ নেতারা। তার জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন কৃষি পরিবারে। পারিবারিক সূত্রেই ধান-চালের ব্যবসায় জড়িত তিনি। জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম ফজলে রাব্বি জানান,সাধন চন্দ্র মজুমদার কৃষক পরিবারেই বেড়ে উঠেছেন এবং তিনি নিজেও কৃষি পেশায় নিয়োজিত। কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র তিনি পেয়েছেন। তার হাত ধরে শুধু নওগাঁ নয়, সারাদেশে কৃষি ও কৃষকের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। নওগাঁ ধান-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন জানান, নওগাঁয় প্রতি বছর ১৬ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। সারাদেশের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে নওগাঁ অন্যতম। এখান থেকে এই পেশায় জড়িত একজনকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলো। তিনি পূর্বসূরিদের চেয়ে ভালো করবেন বলে মনে করছেন। তিনি আরো বলেন, খাদ্য ভান্ডারের মধ্যেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তাকে খাদ্যমন্ত্রী নিয়োজিত করার বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। জানা গেছে, তার পৈত্রিক বাড়ী জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তবে নওগাঁ শহরের পোস্ট অফিস পাড়ায় সপরিবারে বসবাস করেন। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজুমদার ও মা মৃত সাবিত্রী বালা মজুমদার। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সাধন চন্দ্র মজুমদার অষ্টম। ৬৮ বছর বয়সী সাধন চন্দ্র মজুমদার চার মেয়ে সন্তানের জনক। স্ত্রী চন্দনা মজুমদার মারা গেছেন ১৯৯২ সালে। এখন নওগাঁ শহরের পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতেও বসবাস করেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেখানেই তাদের পারিবারিক চালের আড়ত রয়েছে। ১৯৫০ সালের ১৭ জুলাই জন্ম নেওয়া সাধন নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ (স্নাতক) পাশ করার পর বাপ-দাদার পেশা কৃষি ও ধান-চালের ব্যবসা শুরু করেন। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধন স্থানীয় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পদে থাকার পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধনের যাত্রা শুরু হয় নিজের ইউনিয়ন হাজীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর আশির দশকে এরশাদ আমলে আওয়ামীলীগের সমর্থনেই নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সাধন চন্দ্র মজুমদারকে খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় নওগাঁতে বইছে আনন্দের বন্যা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও বইছে স্ট্যাটাসের হাওয়া। ফেসবুকে সাধন চন্দ্র মজুমদারের ছবিসহ পোস্ট ও স্ট্যাটাস দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ র্যালী করা হচ্ছে। নওগাঁবাসী মনে করছেন, সাধন এমপি হয়েই; যে উন্নয়ন করেছেন মন্ত্রী হিসেবে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে নওগাঁ। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনিত হন। নির্বাচনে বিপুুল ভোটের মাধ্যমে তিনবারের নির্বাচিত বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য ডা: ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করেন। এরপর দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনিত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকেকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে টানা তৃতীয় বারের মত সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ‘ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অ ল’ হিসাবে পরিচিত নিয়ামতপুর-পোরশা ও সাপাহার উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির সু-ব্যবস্থা, বনায়ন, শিক্ষা ব্যবস্থায় দৃষ্টান্ত মূলক অবদান রেখেছেন সাংসদ সাধন মজুমদার। সাপাহার উপজেলা ৮৫ শতাংশ এবং পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন। সব মিলিয়ে নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজের ও নিজ দল আওয়ামীলীগের গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে পানি সেচ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করেছেন। পাশাপাশি রান্তা-ঘাঁট, ব্রিজ-কালর্ভাট, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এলাকায় প্রশংসিত হন তিনি। এলাকার মানুষের কাছে ভদ্র, বিনয়ী ও মিষ্ঠ ভাষী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। সাপাহারের প্রদীপ সাহা তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর থানার নয়নের মনি সাধন মজুমদার খাদ্যমন্ত্রী হওয়ায় অনেক অনেক অভিনন্দন। সেই সাথে উনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।’ মোবারক হোসেন প্রতীবন্ধী স্কুল আইডিতে লিখেছেন, ‘অসহায় দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা এবং সকলের আস্থাভাজন বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দাই ভার অর্পণ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে আমরা মনে করি একজন যোগ্য মানুষের হাতে এ দায়িত্বটি তুলে দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাই প্রিয় নেত্রীকে। আপনার হাত ধরে দেশে যে উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে আপনি তেমনি আপনার পাশের লোকগুলো যোগ্য হিসেবে রেখেছেন।’ সাপাহার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামসুল আলম শাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের এমপি মহোদয় সাধন চন্দ্র মজুমদরকে খাদ্যমন্ত্রী করায় আমরা অত্যান্ত খুশি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি সত্যের একটা জয় আছে। সততার মূল্য আছে। উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি একজন যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্যতম স্থানে স্থান দেয়ার জন্য। তিনি আরো বলেন, তিনি এমপি হিসেবে এ আসনের যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছেন মন্ত্রী হিসেবে আরো উন্নয়ন করবেন বলে আমরা আশাবাদী। তার সাথে যোগাযোগ করতে হলে কোনো মাধ্যম লাগে না। শ্রেণি-পেশার মানুষ যে কোন সমস্যা নিয়ে তার কাছে সহজে যেতে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক রণজিত কুমার সরকার জানান, তাকে মন্ত্রী করায় আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জেলায় পূর্ণমন্ত্রী পাওয়া আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিভাষ চন্দ্র মজুমদার জানান, “জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন যোগ্য ব্যক্তিকে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই দিয়েছেন।” নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইকবাল শাহারিয়ার রাসেল বলেন, নওগাঁ খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা- এ বিষয়টি চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; সাধন চন্দ্র মজুমদারকে খাদ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।