বিএনপিতে কারা মাদকের চক্র চালায় তারও সন্ধান চলছে বলে সতর্ক করেছেন ওবায়দুল কাদের। অভিযানে ‘ভুলে’ নিহত একরামুল হক নিজ দলের কর্মী জানিয়ে এ নিয়ে অন্য কাউকে মাথা না ঘামানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, সরকার নিজেই এই ঘটনার তদন্ত করছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এক সেমিনারে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে চিরকুটে পাঠানো প্রশ্নে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ক্ষমতাসীন দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে।
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের ঘটনায় তদন্তের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দাবির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘ইউরোপিয় ইউনিয়ন আমাদের বন্ধু, আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তারা চাইতেই পারে। কিন্তু এখানে আমরা নিজেরাই তদন্ত করছি।’
‘কক্সবাজারের একরামের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। যেটা যেটা অভিযোগ আসছে, সেই বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারই তদন্তের বিষয়ে যথেষ্ট। অন্য কারো মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’
‘শেখ হাসিনা অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেন না। তিনি বারবার বলেছেন, এ অভিযানে যদি কোনও নিরীহ মানুষ টার্গেট হয়, যারা দোষী তারা রেহাই পাবে না। তাদেরও বিচার হবে। আমরা আঁটঘাট বেঁধে নেমেছি।’
অভিযানে প্রাণহানি নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে কাদের বলেন, ‘একরাম কার লোক? আপনাদেরও (বিএনপির) কে কে আছে তা খোঁজা হচ্ছে। আর একরামকে যদি অন্যায়ভাবে কেউ মেরে ফেলে সেটারও কিন্তু বিচার হবে, প্রমাণিত হলে।’
‘আপনাদের (বিএনপি) মধ্যেও কে কোথায় আছে, কে রাঘববোয়াল, কে চুনোপুটি, তা খোঁজা হচ্ছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত।’
বিএনপির ঢাকা উত্তর মহানগর শাখায় দেয়া নতুন কমিটির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘কমিটির বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় দেখলাম। পত্রিকার রিপোর্টে আছে, এর মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী এ কমিটিতে।’
‘তাই আপনারাই (সাংবাদিক) তো স্বীকার করলেন, সদ্যঘোষিত কমিটিতে মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ী আছে। আর কোথায় কোথায় আছে তা খোঁজা হচ্ছে।’
কাদের বলেন, দেশের পরিবেশ যে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে তা নিয়ে রাজনীতিবিদরা কোনও কথা বলছেন না। তারা দূষণ, ভেজাল, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেন না।
‘সবাই তত্ত্ব কথা বলেন, রাজনীতির নানা তত্ত্ব দিয়ে বেড়াচ্ছে সরকার খারাপ, দেশ খারাপ। দেশ আজকে মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে, পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হয়েছে এর কোনও সুনাম নেই।’
‘খালেদা জিয়ার জামিন হাইকোর্টে হলো, আপিল বিভাগেও হলো। তখন কি সরকার হস্তক্ষেপ করেছে? এখন যখন জামিনের আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে তখন তারা তা মেনে নিতে পারছে না। তারা আদালত মানে না।’
‘বিএনপি না এলেও ভোটে আসবে নিবন্ধিত ৩৬ দল’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ‘নিয়ম অনুযায়ী’ হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘এখন বিএনপি না আসলে সময় স্রোত তো অপেক্ষো করবে না। সংবিধান ও গণতন্ত্র কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। ৫ জানুয়ারির ভুলের পুনরুবৃত্তি হলে ভুলের মাশুল বিএনপিকেই দিতে হবে।’
চার বছর আগে বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মুখে ১৫৩ আসনে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ক্ষমতাসীন জোট বা সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় নেতারা সেসব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। তবে এবার আর সে ‘ফাঁদে’ ফেলার ‘খোয়াব’ দেখে লাভ হবে না বলে বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন কাদের।
‘বিএনপি না আসলেও তাঁরা ছাড়া বাকি সব নিবন্ধিত দলই আসবে। নিবন্ধিত দলতো ৩৭টি আছে। একটা গেলে আরও ৩৬টা থাকবে। কোনও অসুবিধা আছে?’
‘বিএনপি ছাড়া সকল নিবন্ধিত দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই ৫ জানুয়ারির মতো আগামী নির্বাচনও তাদের জন্য থেমে থাকবে না।’
বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির চেয়ারম্যন খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবদ্ধ উপস্থান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।
সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জামান।
আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, পরিবেশবিদ আতিক রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাফিজা খাতুন, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
Discussion about this post