আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনে চলছে জয়ের হিসাব-নিকাশ। বিজয়ের মাল্য পড়তে স্ব-স্ব দলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আসনটি ধরে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিংহ ভাগ নেতাকর্মী নতুন প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে দিতে চায়। ক্ষমতায় ভাগ বসাতে ব্যধিব্যস্ত হয়ে পড়ছে জাতীয় পার্টি। বিএনপিতে রয়েছে একক প্রার্থী। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক বিপর্যস্তে এখানে জামায়াতের অবস্থা অনেকটাই ¤্রয়িমান।
প্রার্থীর আলোচনায় যারা : এ আসনে আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল,সংরক্ষিত আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবী, ঢাকা বিমানবন্দর থানা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ শাহজাহান আলী মন্ডল ও সাবেক মেয়র জিয়াউল হক জিয়া। অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু, জাতীয় পার্টির মোস্তফা আল মাহমুদ।
মাঠের অবস্থা : আওয়ামী লীগের চারজন সম্ভাব্য প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির একক সম্ভাব্য প্রার্থী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে। এখানে সাংগঠনিক ভাবে আ’লীগ ও বিএনপি প্রায় সমানে সমান থাকলেও আ’লীগ ঘরের আগুনে পুড়ছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারনে সরকার দলীয় সুযোগ সুবিধা নিয়েও আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ফরিদুল হক খান দুলাল এমপি সাংগঠনিকভাবে আশানুরুপ এগুতে পারছেন না। এখানে নৌকা প্রতীকের মনোনয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন আ’লীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীর সমর্থকরা।
অপরদিকে বিএনপির সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু এবং সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব এএসএম আব্দুল হালিমকে ঘিরে দলটিতে দুটি গ্রুপ রয়েছে। তবে সম্প্রতি আব্দুল হালিম গ্রুপের নিস্ক্রিয়তায় সুলতান মাহমুদ বাবু গ্রুপের নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে এগিয়ে যাচ্ছেন। সবমিলে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি’র প্রার্থী। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) একজন সম্ভাব্য প্রার্থী সুযোগ সন্ধ্যানে রয়েছে। তিনি এখানে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে আ’লীগে ভাগ বসাতে চান। এ আসনে জামায়াত নেতা মাওলানা সামিউল হক ফারুকীর নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে শুনা গেলেও এখানে প্রকাশ্যে জামায়াতকে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়নি।
আ’লীগ: ইসলামপুর আসনে বর্তমানে দুইজন এমপি রয়েছেন। একজন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বর্তমান এমপি আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল এবং অপরজন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার শহীদ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের কন্যা সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবী। তারা দু’জনই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী। এছাড়াও নৌকার মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ করছেন ঢাকা বিমান বন্দর থানা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ শাহজাহান আলী মন্ডল এবং জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া।
এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল জানান, ইসলামপুরের অসহায় মানুষগুলোর কল্যাণ করার চিন্তা নিয়েই রাজনীতির মাঠে নেমেছি। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন না করে ঘরে ফেরার কোনো অভিলাষ আমার নেই। তিনি আরও বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি শতভাগ পূরণের চেষ্টা করেছি। যমুনা নদীভাঙ্গন রোধে ৪৬৮ কোটি টাকা যমুনার পুর্বতীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও ২০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর দুইটি সেতু এবং ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামপুর-বেনুয়ারচর, ইসলামপুর-ঝগড়ারচর ও ইসলামপুর-বকশীগঞ্জ সড়ক নির্মাণ ও পাকা করণের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্বশান ঘাটের উন্নয়ন করা হয়েছে।
মাহজাবিন খালেদ বেবী মোশাররফ এমপি জানান, আমার পরিবারের সদস্যরা বহু আগে থেকেই ইসলামপুরবাসীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। আমার পিতা প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তিনি দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমার চাচা সাবেক ভুমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত রাশেদ মোশাররফ ইসলামপুর আসন থেকে ৬ বার এমপি নির্বাচিত হয়ে একাধারে ৩০ বছর এলাকাবাসীর কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেই সুবাদে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সংরক্ষিত আসনের এমপি বানিয়ে জামালপুর তথা ইসলামপুরবাসীর কল্যাণে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই আমি আমার পিতা খালেদ মোশাররফ এবং চাচা রাশেদ মোশাররফ এর যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে ইসলামপুরবাসীর কল্যাণে অবশিষ্ঠ জীবন উৎসর্গ করতে চাই। সেই সাথে এ দেশকে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। মাহজাবিন খালেদ বেবী এমপি আরও বলেন, বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খাঁন দুলাল বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক যেসব কাজ করেছেন বলে দাবি করেন, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়েছে।
অপরদিকে ইসলামপুরের এলাকায় আগাম নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা বিমান বন্দর থানা আ’লীগের সভাপতি ও জামালপুর জেলা আ’লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আলহাজ শাহজাহান আলী মন্ডল।
শাহজাহান আলী মন্ডল বলেন, ছাত্র জীবন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করে অদ্যবধি আ’লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। নির্বাচনে আমাকে নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন দিলে বিজয় সুনিশ্চিত করে অবহেলিত ইসলামপুরে যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধ করাসহ ইসলামপুরের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবো ইন্শা আল্লাহ।
এ আসনে আ’লীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করে ইসলামপুর কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলাম এবং দীর্ঘদিন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়াও পাঁচ বছর ইসলামপুর পৌর মেয়র এবং দীর্ঘদিন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে দলকে সুসংগঠিত রাখাসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের নানা ভাবে সহযোগীতা করেছি। মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদি।
ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সরদার মাকছুদুর রহমান লাভলু, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার জাকিউল হক এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদুল হক খান দুলালকে মনোনয়ন দিলে ইসলামপুরের আ’লীগ নেতা-কর্মীরা নৌকা প্রতিকের বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেনা।
বিএনপি ঃ এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু দীর্ঘদিন যাবত ইসলামপুরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন এবং বিএনপির দুর্দিনেও দলীয় নেতা-কর্র্মীদের পাশে থেকে জীবনবাজি রেখে দলকে সুসংগঠিত রেখেছেন। এতে বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তাকে ঘিরেই দলীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকায় অবস্থান করলেও মাঝে মধ্যেই ঢাকা থেকে এলাকায় এসে নিয়মিত দলের কেন্দ্রিয় কমৃসুচী পালনসহ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করসহ এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত জোট সরকার আমলে তিনি এমপি হয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করায় ইসলামপুরের সর্বত্রই তার গ্রহণযোগ্যতা সর্বাধিক।
বিএনপির সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ইসলামপুরে বিএনপির রাজনীতি সক্রিয় রয়েছি। ২০০১ সনে বিএনপির এমপি হয়ে দীর্ঘ ৫টি বছর নিরলস পরিশ্রম করে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বিএনপির দুর্দিনেও দলীয় নেতা-কর্র্মীদের পাশে থেকে জীবনবাজি রেখে দলকে সুসংগঠিত রেখেছি। বিএনপির রাজনীতিতে আমার কোনো দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। আমাকে এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবেই বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আমাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিবেন এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
জাতীয় পার্টি ঃ ইসলামপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান বিপু জানান, জাতীয় পার্টির শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ অত্যান্ত সৎ যোগ্য এবং সুশিক্ষিত একজন উচ্চ মেধা সম্পন্ন মানুষ। তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি যমুনা ও ব্রহ্মপুুত্র নদ-নদী বিধৌত অবহেলিত ইসলাামপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের অসহায় মানুষগুলোর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ আসন থেকে আমাকে লাঙ্গল প্রতিকের মনোনয়ন দিয়ে মহাজোটের প্রার্থী করতে আশ^স্ত করেছেন।
জামায়াত ঃ এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে জামায়াতের কেন্দ্রিয় নেতা মাওলানা ড. সামিউল হক ফারুকী বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সুত্রে জানাগেছে। তবে জামায়াত নেতাকর্মীরা বরাবরই অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে জানা যায়।
Discussion about this post