জনতার কলাম ঃ স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং দাগনভূঞা কামরান উল্যাহ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার দাগনভূঞা-ফেনী। মার্চ মানে, বাঙ্গালীর মুক্তির মহামন্ত্রের মাহাকাব্য। মার্চ মানে ঐতিহসিক ৭ই মার্চ, যে দিন জন সমুদ্রে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘোষণা দিলেন, “এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”। তার এই বজ্রকন্ঠে বাঙ্গালীর প্রাণ হয়ে উঠে শব্দময়। গ্রামে শহরে ঘরে রাজপথে, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সুরমা আর ব্রক্ষপুত্রের অববাহিকায় নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, নির্বিশেষ জেগে উঠলো নূতন প্রানের ম্পন্দন। মিছিলে মিছিলে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠলো বাংলার বুকে। ‘৭১ এর ২৫শে মার্চ ছিল মৃত্য ভয়াল রাত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মেশিন গানের বুলেট বৃষ্টি রাজপথে, ক্যাম্পাসে, ঘরে-বাইরে রক্তের বণ্যা ২৬শে মার্চ এলো আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা। ঢাকার বুকে ঘুমে থাকা জনগণের বুকের উপর হানাদার বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল। এসময় প্রতিরোধ গড়ে তুলে ইপিআর, পুলিশ, আর ছাত্র জনতা। শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। মানুষ কেবল ছুটে চলেছে এখান থেকে ও খানে শহর থেকে গ্রাম, এরি মধ্যে রয়েছে তাড়া খাওয়া সেনা পুলিশ এবং ইপিআর বাহিনীর সশস্ত্র সেনা। এখানে সেখানে শুধু গুলির শব্দ। তরুণ ছাত্র জনতা যুবক ট্রেনিং নিচ্ছে আর তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগ দিচ্ছে তাড়া খাওয়া সেই সশস্ত্র সেনারা। বাঙ্গালীর ভয়ে বিহারী পাকিস্তানী পালীয়ে বেড়াচ্ছে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বাঙ্গালী অথচ কারো সাথে কারো কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই তবু ৭১’এর ২৫শে মার্চ রাত্রের পর শত্রুতার যেন কোন শেষ নেই। এই অবস্থায় সেদিন দেশ মাতৃকার স্বাধীকার আদায়ের লড়াইয়ে দাগনভূঞার জনগণও পিছু হটে রহেনি। দাগনভূঞার দামাল মায়ের তরুণ ছাত্র যুবক দলে দলে সীমান্ত পাড়ী দিয়ে যোগ দিতে থাকে মুক্তিবাহিনীতে। ভারতের ছোত্তাখোলা, একিনপুর, হরিণায় ও বগাপাড়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং চলছিল। দাগনভূঞার কৃতি সন্তান ক্যাপ্টেন গোলাম মাওলা সেখানে মুক্তিযুদ্ধে লোক ভর্তি করতেন। তারই সুবাধে দাগনভূঞার লোক অনায়াসে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং এ যোগ দেয়ার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের দেয়া শেষ তথ্যানুসারে দাগনভূঞার ছাত্র জনতা ও তাড়া খাওয়া সেনা সহ সর্বমোট ৩২০(তিনশত বিশ) জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। অপর দিকে গুটি কতেক পাকিস্তানি সমর্থক ছাড়া প্রায় সকলই মুক্তিযোদ্ধাদের কে সহযোগিতা করে। এলাকার যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় এবং যারা মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ছিল। পাকিস্তানীরা রেজাকারদের সহায়তায় তাদের বাড়ীঘরে হামলা, লুট তরাজ, আর আগুন লাগিয়ে জ্বালীয়ে দিয়ে তাদের স্তব্দ করে দিতে চেয়েছিল। জ্বালীয়ে দেয়া হয় ক্যাপ্টেন গোলাম মাওলার বাড়ী সহ ২৫/৩০টি বাড়ি। তাদের হাতে নিহত হয় যথাত্রুমে জগতপুরের মফিজ, আবু তাহের, আবদুল বারেক। এয়াকুব পুরের- আবদুল গফুর, নয়নপুরের- নুরুল হক, আজিজফাজিল পুরের- সাবধন মিয়া, রামনগরের- হাবিবউল্যাহ, ধর্মপুরের- এস এম কামাল, কৈখালির- হুমায়ুন, খুশিপুরের- আহসান উল্যাহ, গনীপুরের- মেজর খালেক, মঞ্জুর মোরশেদ, মোমারিজপুরের- ছিদ্দিক মেম্বার, আবুল কাশেম, সেকান্তরপুরের নুরুল ইসলাম ও উত্তর আলীপুরের এলুমিয়া প্রমুখ। গাঢ় সবুজের মাঝখানে লাল টকটকে সুর্য খচিত মানচিত্র চিনিয়ে আনার পর এ যানত রোগে শোকে বার্ধক্যে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করে তাদের মধ্যে কয়জনের নাম উল্লেখ করা হলো- রামমগরের- পুলিশ সুপার আমাম উল্যাহ, উদরাজপুরের – শাহ আলম, জগতপুরের- ক্যাপ্টেন গোলাম মাওলা, চানপুরের- আনদুল হক চোকদন, হাসান গনীপুরের- সফিউল্যাহ, দক্ষিণ আলীপুরের- ইউছুপ, জাঙ্গালিয়ার – আবদুর রশিদ, আবদুল নবীর, মালেক, উত্তর আলীপুরের- আহম্মদ উল্যাহ্, মোমারিজপুরের- আলী নেয়াজ, আলাইয়ার পুরের – সামছুল আলম, বারাহি গোবিন্দপুরের- মুলকুতুর রহমান, সাদেকপুরের- তাজুল ইসলাম, কৈখালির- যদু গোপাল ভৌমিক। ছবি লেখক আলাউদ্দিন
|
Discussion about this post