অন্তর নওগাঁ প্রতিবেদকঃমঙ্গলবার বেলা ১১টায় নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী প্যারীমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে এ শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রাটির আয়োজন করে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ। পরে শহরের মুক্তির মোড় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন ও শহীদদের আত্মার শান্তি কামণায় একমিনিট নীরবতা পালনা করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের উপদেষ্টা বিন আলি পিন্টু, সভাপতি অ্যাড: আব্দুল বারী, সাধারন সম্পাদক এমএম রাসেল, নাইচ পারভীন, বিষ্ণ কুমার দেবনাথ, আনন্দ কুমার, সমাজসেবী তসলিমা ফেরদৌসীসহ প্রমূখ।
জানা যায়, দেশ স্বাধীন হবার প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরও পাকিস্থানি বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় দুই হাজার পাকিস্থানি সেনা (১৮ ডিসেম্বর) নওগাঁয় যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
নওগাঁ, নবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, হিলি, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর অঞ্চল ৭ নম্বর সেক্টর নিয়ে গঠিত। এই সেক্টরের প্রথম দিকে ক্যাপ্টেন গিয়াস, পরবর্তীতে মেজর নাজমুল হক এবং তার মৃত্যুর পর মেজর নুরুজ্জামান ছিলেন অধিনায়ক। দেশের অভ্যন্তরে প্রেরিত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন পরিকল্পনা রচনা, তাদের ব্যয়ভার বহন ও রসদপত্র সরবরাহের বিষয়ে আব্দুল জলিল তত্বাবধায়ক ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন নওগাঁর দু’জন কৃতিসন্তান জালাল হোসেন চৌধুরী ও আখতার আহমেদ সিদ্দিককে সিএন্ডসি স্পেশাল প্রশিক্ষন দেয়া হয়।
১৮ মার্চের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন পাঞ্জাবী মেজর আকরাম বেগ। দু’জন ক্যাপ্টেনের মধ্যে একজন ছিলেন পাঞ্জাবী নাভেদ আফজাল, অন্যজন বাঙ্গালী ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। ২৫ মার্চের আগে বাঙ্গালী মেজর নাজমুল হক নওগাঁয় ইপিআর এর কমান্ডিং অফিসার হিসাবে বদলী হয়ে আসেন। দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে মেজর বেগ তাকে চার্জ বুঝিয়ে দিতে অসম্মত হন। পরবর্তীতে কৌশলে ২৪ মার্চ মেজর আকরাম বেগ ও ক্যাপ্টেন নাভেদ আফজালকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সাথে পশ্চিম পাঞ্জাবের ঝিলামের অধিবাসী নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক নিসারুল হামিদকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা বন্দী অবস্থায় স্বপরিবারে নিহত হন।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্থান সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পনের খবর শুনবার পরও নওগাঁর পাকিস্থান সেনাবাহিনীরা অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরদিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকাল। মুক্তিবাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে আসতেই পাকিস্থানী সেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত্রী ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিলনা। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারী গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্ত¡র এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্নসমপণ করে। ফলে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর।
Discussion about this post