মোঃ ফয়সাল এলাহীঃ নগরীর পাহাড়তলী রেলক্রসিং দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে রেলওয়ের অনেক মূল্যবান পুরনো যন্ত্রপাতি। কিন্তু সময় মতো বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে এবং সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। অপরদিকে মালামাল সংরক্ষণাগারটিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে প্রতিনিয়তই খোয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মালামাল। এরপরও কার্যকর উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। নগরীর পাহাড়তলী রেলক্রসিং এলাকা সংলগ্ন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পুরোনো সেইল ডিপোটির চিত্র এটি। এখানে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের মূল্যবান মালামাল অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। বরং কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার সুযোগে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ডিপোর মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে কৌশলে। আবার মাদকসেবীরাও (হেরোইন, গাজাসেবী) চুরি করছে এসব মালামাল। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে পাহাড়তলী রেলওয়ের পুরনো সেইল ডিপোর দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউনুস বলেন, ‘আমি আসার পর থেকে এখন সংঘবদ্ধ চক্র আর মালামাল সরানোর সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের তৎপরতা বন্ধ। তবে ডিপোর সীমানা দেয়াল নিচু হওয়ায় বিভিন্ন মাদকসেবী ও চোরের দল সুযোগ বুঝে ডিপোর মালামাল হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি মালামালের চুরি ঠেকাতে মালামাল রাখার জন্য শেড নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীরের দেয়াল উঁচু করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এছাড়া সংরক্ষিত মালামাল দ্রুত সময়ে বিক্রির ব্যবস্থা করার ওপরও জোর দেন। কারণ ইতিমধ্যে অনেক মালামাল সম্পূর্ণ নষ্ট ও ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক প্রকৌশলী মো. রাহিদ হোসেন পুরোনো ডিপোর উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের সীমানা দেয়াল উঁচু করা ও তাতে কাঁটাতার দেয়ার বিষয়ে রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। জানা যায়, গত বছরের শেষ দিকে ডিপোর মালামাল ট্রাকে করে সরিয়ে ফেলার সময়ে পাহাড়তলী থানার টহল পুলিশ হাতে নাতে একজনকে আটক করে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এ ঘটনায় খুলশী থানায় মামলা করেছে। ডিপোর মালামাল চুরির বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকেও একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবুও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি ডিপোতে যেসব মালামাল রয়েছে : সরেজমিনে ডিপো এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে রেলওয়ের ব্যবহৃত বিভিন্ন পুরোনো যন্ত্রপাতি। কোনো কোনোটি মরচে পড়ে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। পুরোনো মালামালের মধ্যে রয়েছে অকেজো বগি, ইঞ্জিন, এম এস স্ক্র্যাপ, পুরোনো বাল্ব, স্টিল স্প্রিং, কপার স্ক্র্যাপ, এলুমিনিয়াম স্ক্র্যাপ, পুরোনো আসবাব প্রভৃতি। দুর্বল সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তা : ডিপোর পূর্ব-পশ্চিমের দেয়ালের উচ্চতা খুবই কম। অনায়াসে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকা ও বের হওয়া যায়। ডিপোর এক কোণে রয়েছে, একটি মাত্র নিরাপত্তা চৌকি। এখানে ঢাল-তলোয়ার বিহীন (নিরস্ত্র) তিনজন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে পালাক্রমে পাহারায় নিয়োজিত থাকেন বলে জানা গেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতি তিনমাস পর পর পুরোনো মালামাল বিক্রির জন্য টেন্ডার বা দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু টেন্ডারে মালামালের দর বনিবনা না হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত আর বিক্রি হয় না। এ বিষয়ে গত ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানের সই করা এক অডিট আপত্তিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন পাহাড়তলী সেইল ডিপোতে খোলা আকাশের নিচে অবিক্রিত অবস্থায় মালামাল ফেলে রাখার কারণে রেলওয়ে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৬২ হাজার ১৭৮ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার অডিট আপত্তিতে অবিলম্বে ডিপোর মালামাল বিক্রি এবং ডিপোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পরামর্শ দেয়া হয়।জানাগেছে ২ কোটি টাকার পুরনো যন্ত্রপাতি অরক্ষিত পাহাড়তলী রেলওয়ে ডিপো থেকে খোয়া যাচ্ছে মালামাল।