৭১ বাংলাদেশ ডেস্কঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনলাইনে নোংরামি বন্ধ করতেই সাইবার সিকিউরিটি (ডিজিটাল নিরাপত্তা) আইন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই আইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষোদ্গার ও নোংরামির বিরুদ্ধে লড়তে কাজে লাগবে।
বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে সোমবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ অধিবেশনে তার যোগদান এবং এই সফর সংক্রান্ত বিষয়ে জানাতে গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নিউইয়র্কে ছয় দিনের সফরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে এ সফরকালে তার পুরস্কার প্রাপ্তিসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক ও তার ফলাফল বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি প্রত্যেক দেশে বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেখানে সামাজিক, পারিবারিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, পর্নো ইত্যাদি ছড়াচ্ছে। আমরা সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ফেসবুকে ক্রিকেটার লিটন দাসের সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের শিকার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ‘ক্রিকেটার লিটন দাস দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে দেবীর ছবিসহ একটি পোস্ট দেওয়ার পর ফেইসবুকে ‘বাজে ও বিকৃত’ মন্তব্যের শিকার হন। পরে তিনি ওই পোস্ট সরিয়ে নেন। এ ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে সরকার কী উদ্যোগ নেবে।’
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো মোকাবেলার জন্য আমরা সাইবার সিকিউরিটি আইন করেছি। এ ধরনের নোংরামি যেন না হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছেলেটা (লিটন দাস) যেভাবে খেলেছে খুবই চমৎকার। তার আউটটি ছিল আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। তাকেও একটি পোস্টের জন্য গালিগালাজ করা হয়েছে। এগুলো মোকাবেলায় সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বে এ ধরনের সাইবার হামলা সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। যারা এ ধরনের মন্তব্য করেছে তারা বিকৃতমনা। তাদের রুখতে সমাজের সবাইকে বিশেষ করে সাংবাদিকদেরকেও ভূমিকা রাখতে হবে।’
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩ তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালজুলেইদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনা সভায়ও যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট, সাইবার নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা এবং বৈশ্বিক মাদকদ্রব্য সমস্যা নিয়ে কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) প্রদত্ত সম্মানজনক ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয়দানের মাধ্যমে মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করায় তাকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। পাশাপাশি দূরদৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার জন্য গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন- এর পরিচালনা পর্ষদ তাকে ‘২০১৮ স্পেশাল রিকগনাইজেশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’- এ ভূষিত করে।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। নিউইয়র্কে সফরের দ্বিতীয় দিন ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শরণার্থী সংকট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে শেখ হাসিনা এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনটি প্রস্তাব রাখেন।
Discussion about this post