৭১বাংলাদেশ প্রতিনিধিঃকুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স আদর্শ বিদ্যালয়টির নিজস্ব জমি না থাকায় অস্থায়ী অবস্থায় এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
দ্রুত সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। জানা যায় বাল্যবিয়ে, অপুষ্টি, চিকিৎসার অভাবসহ নানা কারণে সারাদেশের ন্যায় এই এলাকাতেও প্রতিবন্ধী শিশু নেহায়েত কম নয়। অপর দিকে উপজেলা সদর সহ আশেপাশের দুই উপজেলায় আর কোন প্রতিবন্ধী স্কুল না থাকা এবং প্রয়োজনীয় দেখভালের অভাবে এ অঞ্চলের প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েরা শিক্ষা ও সংস্কৃতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত হচ্ছে।
এই উপলব্ধি থেকে ০১-০৭-২০১৫ সালে নারী সমাজকর্মী মোসাম্মৎ তামান্না আক্তারের প্রচেষ্টায় রাজামেহার প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স আদর্শ বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ স্কুলে দেবিদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের প্রায় দুইশতাধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ১১নং রাজামেহার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকার ,প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ তামান্না আক্তার, পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ জসিম মোল্লা ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ প্রায় অর্ধযুগ আগে এলাকাবাসীর অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা নিয়ে রাজামেহার প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স আদর্শ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ভাড়া যযায়গায় একটি টিন ঘরে চারটি কক্ষে প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস ও অফিসের কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রত্যান্ত গ্রাম ও উপজেলা সদর হতে দুরে হওয়ায় স্কুলের উন্নয়নে কেউ নজর দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটির উপর সরকারের দৃষ্টি না পড়ায় এখনো কোনো প্রকার সরকারি সহযোগিতা জোটেনি।
এমনকি শিক্ষকরাও পান না কোনো বেতন-ভাতা। নেই কোন নিজস্ব জমি,প্রতিষ্ঠা কাল হতে ২০৮ জন বুদ্ধি, দৃৃষ্টি, বাক ও শ্রবণসহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধীদের ১৪ জন শিক্ষিকা দ্বারা শিক্ষা ও সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ তামান্না আক্তার। দ্রুত সরকারি সহযোগিতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
প্রধান শিক্ষিকা মোসাম্মৎ তামান্না আক্তার জানান,জায়গার জন্য রাজামেহার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চেরাগ আলীর বাড়ির পাশে) ০১ নং খতিায়ানভুক্ত ২০০৫ দাগে ৩৯ শতক খাশ জমির বিপরিতে উপজেলা ভুমি অফিস বরাবর আবেদন করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ জয়নাল আবেদীন এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি শাহিদা আক্তার আশ্বস্থ করেছেন যেন স্কুলটির একটা স্থায়ী জায়গা হয় সে ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা করবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি শাহিদা আক্তার জানান,অকৃষি জমি স্কুলের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়ার একটু আইনগত বাধা আছে,তবে মাননীয় জেলা প্রশাসক একটি ভাল উপায় বলে দিতে পারেন। তাই জেলা পর্যায়ের আগামী সভায় বিষটি উত্থাপন করব এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্যারের সাথে দেখা করার পরামর্শ দিয়েছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে হলে আগে বিদ্যালয়ের নিজস্ব একটু জমি প্রয়োজন যার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং আমার সাধ্যমত সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া প্রতিবন্ধী ছাত্র/ছাত্রী পরিবহন এবং অবকাঠামোগত ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে।
এই মহতি উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে নেয়ার জন্যে প্রশাসনের কাছে সকল সহযোগিতার দাবি জানান তিনি। উল্লেখ্য,পাঁচ বছর থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধীদের এখানে ভর্তি করা হয়। প্রতিষ্ঠা বছর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে বুদ্ধি, দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণসহ ১২ ধরনের ২০৮ জন প্রতিবন্ধীকে ভর্তি করে শিক্ষা ও সেবা দেয়া হচ্ছে। ভর্তি ফি ছাড়া এবং কোনো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক বা বাৎসরিক খরচ নেয়া হয় না।
শুক্রবার ছারা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুল খোলা রেখে শিক্ষা ও সেবা দেয়া হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আরও জানান, প্রতিবন্ধী স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার সময় থেকে এলাকাবাসীর ব্যাপক অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা পেয়ে আসছি।
বর্তমানে স্কুল শিক্ষক কর্মচারীরা কোনো বেতন-ভাতা পান না। নিজ থেকেই শিক্ষকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কত দিন এভাবে সেবা দিতে পারবো তা বলতে পারি না। তবে সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে স্কুলটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর দিতে সুবিধা হবে এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা তৈরি হবে।