২৭ বছর অপেক্ষার পর রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নাবিকরা নতুন জাহাজ আনতে চীন যাচ্ছেন। প্রকল্প পরিচালক, ক্যাপ্টেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার, চিফ অফিসার, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ক্রু মিলে ৩০ জন চীনের টিকিট পেয়েছেন।
‘এমভি বাংলার জয়যাত্রা’ নামের নতুন পণ্যবাহী জাহাজটি বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) বিএসসিকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, বিএসসির জন্য এনওয়াইজেড শিপইয়ার্ডে নির্মিত নতুন জাহাজটি ১৮০ মিটার লম্বা। ড্রাফট বা পানির নিচে থাকবে জাহাজটির ১০ দশমিক ৫ মিটার। পাঁচটি হেজে (খোপ) জাহাজটি পরিবহন করতে পারবে ৩৮ হাজার ৮৯৪ টন কার্গো বা খোলা পণ্য। সিমেন্ট ক্লিংকার, গম, কয়লা, চাল, ডাল, ছোলাসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালই পরিবহন করে থাকে এ ধরনের জাহাজ। এসব পণ্য লোড-আনলোডের জন্য জাহাজে রয়েছে ৩০ টন ক্ষমতার ৩টি এবং ৩৫ টন ক্ষমতার ১টি ক্রেন (গিয়ার)।
আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গিয়ার বাল্ক ক্যারিয়ার ‘জয়যাত্রা’য় ৩টি শক্তিশালী জেনারেটর, ১টি মেইন ইঞ্জিন, ১টি প্রপেলার, সমুদ্রের পানিকে পানের উপযোগী করতে ফ্রেশ ওয়াটার জেনারেট সিস্টেম, ২৫০ টন ধারণক্ষমতার পানির ট্যাংক, ৩৫ জন নাবিকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং ১২ হাজার ৯০০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতার ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম রয়েছে। জাহাজটি চলবে হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) এবং মেরিন ডিজেল অয়েলে (এমডিও)।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, জাহাজে ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন একটি জাহাজ খালি অবস্থায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায় তখন ন্যূনতম ড্রাফট বজায় রাখার জন্য সমুদ্রের পানি ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্যাংকে ভরে নেওয়া হয়। এসব পানিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেমে ওই পানিতে আল্ট্রা ভায়োলেট রে (রশ্মি) দিয়ে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করা হয়। নয়তো জীববৈচিত্র্য ও মৎস্যসম্পদ নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘জয়যাত্রা’ মেরুঅঞ্চল বরফ আচ্ছাদিত সাগর ছাড়া বিশ্বের যেকোনো দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। বিএসসি চাইছে চীন থেকে জাহাজটি খালি না এনে পণ্য নিয়ে আসতে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে টাইম চার্টারে দৈনিক ভিত্তিক কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান জাহাজটি ভাড়া নিলে জ্বালানি খরচ বাদে ১০-১২ হাজার ডলার আয় করতে পারবে ‘জয়যাত্রা’। যদি ট্রিপ হিসেবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় তবে চীন থেকে বাংলাদেশে ৩৬ হাজার টন পণ্য পরিবহনে ভাড়া পাবে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর ইয়াহ্ইয়া সৈয়দ বলেন, সব কিছু ঠিক থাকলে ১৯ জুলাই ‘এমভি জয়যাত্রা’ বুঝে নেবে বিএসসি। এ লক্ষ্যে ক্যাপ্টেন-অফিসার-ক্রু মিলে ৩০ জন চীন যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশিরভাগই পৌঁছে গেছেন। সোমবার (১৬ জুলাই) দিনগত রাতে প্রকল্প পরিচালকসহ আরও প্রায় ১৬ জন নাবিক চীনের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরও পাঁচটি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’, ‘এমভি বাংলার অর্জন’, ‘এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা’, ‘এমটি বাংলার অগ্রদূত’ ও ‘এমটি বাংলার অগ্রগতি’ বিএসসিকে বুঝিয়ে দেবে সিএমসি।
সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে সর্বশেষ বিএসসির বহরে যুক্ত হয়েছিল চীনে নির্মিত ‘এমভি বাংলার শিখা’। বর্তমানে মাত্র দুইটি অয়েল ট্যাংকার আছে বিএসসির বহরে। ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয়েছিল ডেনমার্কে। ট্যাংকার দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ বড় ট্যাংকার থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে পতেঙ্গার বিভিন্ন ডিপোতে নিয়ে আসে।
চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসসি’র জন্য ছয়টি জাহাজ নির্মাণ করছে সিএমসি। এর মধ্যে চীন সরকার দিচ্ছে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি এবং বিএসসি দিচ্ছে ৩৯৫ কোটি টাকা।
Discussion about this post