বাগেরহাট-৩ সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে চলেছেন সদ্য নির্বাচিত খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রী; আওয়ামী লীগ মানোনীত প্রার্থী হাবিবুন নাহার। আর কোনো দলের প্রার্থী এই উপ-নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণাটাই শুধু বাকি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে এসে হাবিবুন নাহার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন রিটার্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার।
এ সময় তার স্বামী ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ ডা. মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাংসদ মীর শওকাত আলী বাদশা, সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকুসহ কয়েক শ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তালুকদার আব্দুল খালেক এই আসনটি ছেড়ে দিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করেন। স্ত্রী সে আসনে বিজয়ী হতে চলায় বাগেরহাট-৩ আসন বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতার পকেটেই থাকলো। নির্বাচন কমিশন এখন হাবিবুন নাহারের মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই করবে এবং ৪ জুন তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করবে।
এরআগে গত ২২ মে নির্বাচনে অংশ নিতে জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে হাবিবুন নাহারের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জেলা তাঁতীলীগের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর তালুকদার আব্দুল বাকী।
তবে এই আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী স্বতন্ত্র প্রার্থী চলচ্চিত্র নায়ক শাকিল খান তার সংগ্রহ করা মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হাবিবুন নাহারের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রইল না।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক রামপাল-মংলা আসন থেকে পদত্যাগ করে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে অংশ নিলে ওই আসনটি শূন্য হয়। তার ছেড়ে দেয়া আসনে স্ত্রী হাবিবুন নাহারকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দেয়। এরআগে তিনি ২০০৮ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুন নাহার সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিগত দিনেও এই আসনের সাংসদ ছিলাম। এই আসনে আবার নির্বাচিত হলে আমার অসমাপ্ত কাজ শেষ করব। এলাকার মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে তার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বাগেরহাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, বাগেরহাট-৩ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হাবিবুন নাহার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে নির্বাচন কমিশন থেকে সংগ্রহ করা দুটি মনোনয়নপত্রের মধ্যে একটি জমা পড়েছে। এই আসনের উপ নির্বাচনে অংশ নিতে অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাকিল আহসান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও তিনি তা জমা দেননি। ফলে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হাবিবুন নাহারের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তার জমা দেয়া মনোনয়নপত্রে কোনো ত্রুটি না থাকলে তিনি এই আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে চলেছেন। আগামী ৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে কেন তা জমা দিলেন না তা জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী চলচ্চিত্রনায়ক শাকিল খান মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত নই। তবে আমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি। আমার বাড়ি রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামে। আমার পিতৃভূমির সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শূন্য হওয়া আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু গত ২০ মে বাগেরহাট-৩ আসনের শূন্য পদের উপ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে গণভবনে ডেকে ভবিষ্যতে রাজনীতির জন্য প্রস্তুতি নিতে বলায় আমি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমি আমার সংগ্রহ করা মনোনয়নপত্রটি জমা না দিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী হাবিবুন নাহারকে সমর্থন জানাচ্ছি।
আগামী ২৭ মে যাচাই বাছাই এবং ৩ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ধার্য রয়েছে। আগামী ২৬ জুন এই আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
রামপাল ও মোংলা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন গঠিত। এখানে নারী পুরুষ মিলিয়ে মোট ভোটার দুই লাখ ২৬ হাজার ২৪৯ জন। এখানে কেন্দ্র সংখ্যা ৯০টি।