৭১ বাংলাদেশ ডেস্কঃমাদক অপরাধীদের পরাস্ত করতে নিজেদের নেই কোন আগ্নেয়াস্ত্র, গাড়ি আছে ১টি, লোকবল সর্বসাকুল্য ৯ জন। এমনি দুরবস্থায় চট্টগ্রাম নগরী, সীমান্তবর্তী একাধিক জেলাসহ মোট ১১টি জেলাতে মাদক নিয়ন্ত্রণে নিজেদের অস্থিত্ব টিকিয়ে রেখেছে স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের তথ্য মতে. ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন ১ জন উপ পরিচালক, ১ জন সহকারী পরিচালক, ১ জন তত্ত্বাবধায়ক, ১ জন পরিদর্শক, ১ জন সহকারী পরিদর্শক ও ৪ জন সিপাহী। লজিস্ট্রিক সার্পোট হিসেবে রয়েছে ১টি পিকআপ গাড়ি। এই কার্যালয়ের অধীন ১১টি জেলা কিংবা থানা পর্যায়ে নেই কোন গোয়েন্দা শাখার কার্যালয় কিংবা জনবল।
জানা যায়, মায়ানমার ও ভারত সীমান্তবর্তী জেলা থেকে পানির স্রোতের মতো দেশে অবৈধভাবে আসছে ইয়াবাসহ নানাবিধ মাদক দ্রব্য। অভিযোগ রয়েছে, এই ব্যবসা পরিচালিত হয় অনেকটা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবং এতে সহযোগিতা করে দুর্নীতিবাজ কিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য। আশংকার কথা হচ্ছে, বতর্মানে মাদক ব্যবসায়িরা নিজেদের ব্যবসাকে নির্বিঘ্ন করতে ব্যবহার করছে আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একাধিক অভিযানে মাদক ব্যবস্যায়ীদের দখল থেকে উদ্ধার করেছে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ মাদকের গড ফাদারের নিজের এলাকায় রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। সরকারী কিংবা বিরোধীদলের সাথে রয়েছে তাদের ব্যাপক সখ্যতা। নাটের গুরু এইসব নেতারা বরাবরের মতোই রয়ে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে। আইনের বাধ্যবাধকতার কারনে এদের আটক করে তাদের মুখোশ উম্মোচন করে আইনের কাটগড়ায় দাঁড় করানো এক প্রকার দুরূহ কাজ।
অভিযোগ রয়েছে মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়েছে নানা পেশার লোকজনের সাথে দুর্নীতিবাজ একাধিক পুলিশ। কোন এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গেলে স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতা নিতে হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিযানের আগেই পুলিশ কিংবা তাদের সোর্সের মাধ্যমে অগ্রিম খবর মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যায়। ফলে অনেক সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের শুন্য হাতে অভিযানের ইতি টানতে হয়।
তারপর ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদকের গোয়েন্দারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। চেষ্টা করা হয় স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ না নিয়ে রিজার্ভ থেকে পুলিশ নেয়ার। ইতিমধ্যে মাদক ব্যবসায়ীরা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে, যা নিরস্ত্র মাদক গোয়েন্দাদের কাজকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বতর্মানে চট্টগ্রাম মাদক নিয়ন্ত্রন গোয়েন্দা কার্যালয়ে লোকবলের অভাবে কোন শিফটিং ডিউটি করা সম্ভব হয় না। কোথাও গোয়েন্দারা অভিযানে গেলে পরবর্তী অন্যকোন অভিযানে যাওয়া সম্ভব হয় না। তা ছাড়া সম্বল তো সেই ১টি পিকআপ, যার উপর ভরসা পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের গোয়েন্দা ইউনিট।
এতসব নাই নাইয়ের মাঝেও চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচাকের (গোয়েন্দা) দায়িত্বে নিয়োজিত মোহাম্মদ শওকত ইসলাম জনবল সংকটের কারণে অভিযান ব্যাহত হয়ে কাঙ্কিত সাফলতা আসছে না জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে অন্তত অতিরিক্ত ১টি ইউনিট যদি বাড়ানো যেতো, তবে মাদক উদ্ধার অভিযানে আরো ব্যাপক সফলতা পাওয়া যেতো।’
আগামীতে জনবল নিয়োগ হবে জানিয়ে উপ পরিচালক (গোয়েন্দা) আরো বলেন,‘ আমাদের জনবল সংকটসহ আরো নানাবিধ বিদ্যামান সমস্যার ব্যাপারে উধর্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। বতর্মানে নতুন জনবল নিয়োগের কাজ চলছে, তবে এর সফলতা পেতে আরো ২-৩ বছর অপেক্ষো করা হতে পারে।’
অভিযান পরিচালনা করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে জানিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ চট্টগ্রাম মহানগরী ছাড়া ও ১১টি জেলাতে বিদ্যামান জনবল নিয়ে কাজ করতে কষ্ট হলে ও আমরা সর্বোচ্চ কাজ করছি। বাস্তবেই আরো অনেক জনবল প্রয়োজন।’
সরকারের উপর মহলকে জনবল সংকটের কথা অবগত করা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত পরিচালক আরো বলেন, ‘এই ব্যাপারে সরকারকে জানানো হয়েছে। জনবল নিয়োগের ব্যাপারে কাজ চলছে।’ মাদকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম ঝুঁকিপূণ চট্টগ্রাম বিভাগে আরো কি পরিমান জনবলের প্রয়োজন, কি পরিমান জনবলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে এবং কবে নাগাদ চলমান এই জনবল সংকট সমাধান হবে তা জানতে চাইলে মোঃ মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী শুধু বলেন, ‘ বিষয়টি সরকারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের তথ্য মতে, ‘২০১৬ সালে অন্যান মাদক ছাড়া ও শুধু ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৮০ হাজার ৭৬৪ পিচ, মামলা হয়েছে এইখাতে ৫৬টি। ২০১৭ সালে ইয়াবা উদ্ধার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৩, মামলা ৮৫ টি এবং চলতি বছর ২০১৮ সালের জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৮ হাজার ৫৯ পিচ ইয়াবা উদ্ধার এবং মামলা হয়েছে ২৭টি।
Discussion about this post