মহিনুল ইসলাম সুজনঃনীলফামারী ॥কুমিল্লায় ইটভাটায় নিহত ১৩জন শ্রমিকের পরিবারকে নীলফামারীর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সরকারীভাবে বুধবার(৬ই ফেব্রুয়ারী) চেক বিতরন করা হয়েছে।
চোখের জলে ভাসছিল চেক বিতরন অনুষ্ঠানটি। সন্তানহারা বাবা মা ও স্বামী হারা স্ত্রী ও সন্তানের আহাজারি যেন থামেনি। কুমিল্লার সেই মর্মান্তিক ট্র্যাজিডির শোক আজও বয়ে নিয়ে বেরাচ্ছে পরিবারগুলো। ২৫ জানুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দ গ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকায় কাজী অ্যান্ড কোং নামের একটি ইটভাটায় কয়লার ট্রাক উল্টে ঘুমন্ত যে ১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল। সেই নিহত শ্রমিকদের প্রতি পরিবারকে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে নীলফামারী জেলা প্রশাসনের সম্মেলনের কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চেক বিতরন করা হয়। নিহতরা সকলেই নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা। নিহতদের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের শ্রমিক কল্যান তহবিল হতে এই অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসন এবং রংপুর বিভাগীয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এই চেক প্রদানের আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের সভাপতিত্বে চেক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের মহাজোটের সংসদ সদস্য মেজর(অবঃ) রানা মোঃ সোহেল, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মোতালেব সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহীনুর আলম, জলঢাকা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুজা-উদ দৌল্লাহ, রংপুর বিভাগীয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহা পরিদর্শক সোমা রায়, জেলা জজ আদালতের পিপি এ্যাডঃ অক্ষয় কুমার রায়, মীরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান হুকুম আলী খান ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক নিহত পরিবারের হাতে এই চেক তুলে দেন।
রংপুর বিভাগীয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহা পরিদর্শক সোমা রায় জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের নিয়ম অনুযায়ী নিহত বিবাহিত শ্রমিকদের স্ত্রীরা এক লাখ করে ও অবিবাহিত শ্রমিকদের বাবা ও মাকে পৃথক ভাবে ৫০ হাজার করে চেক প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে তিন জন শ্রমিক ছিলেন বিবাহিত ও দশ জন শ্রমিক ছিল অবিবাহিত। এদের মধ্যে আবার নিহত শ্রমিকদের মধ্যে যাদের বাবা অথরা মা মৃত্যু বরন করেছে তাদের জীবিত থাকা বাবা অথবা মাকে এক লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে। উক্ত কর্মকর্তা আরো জানান ওই ঘটনায় আহত দুইজন একই এলাকার বিষ্ণু চন্দ্র রায় ও রিপনকে ইতোপূর্বে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ৫০ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়।
তিনি আরো জানান এক লাখ টাকা করে চেক পায় নিহত শ্রমিক রঞ্জিত রায়ের স্ত্রী সচি রাণী, কনক চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ববিতা রাণী ও বিকাশ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী প্রবিতা রাণী রায়, হরি কিশোরের বিধবা মা জনতা রাণী, মৃণাল চন্দ্র রায়ের বিধবা মা চারুবালা ও মনোরঞ্জন রায়ের মা মারা যাওয়ায় তার বাবা অমুল্যচন্দ্র রায়।
অপর দিকে যে সকল শ্রমিক বিবাহিত নয় তাদের বাবা ও মা জীবিত রয়েছে তাদের পৃথক ভাবে ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। এরা হলেন সেলিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম ও মা রশিদা বেগম, তরুন রায়ের বাবা মানিক রায় ও মা সরোলা বালা, বিপ্লব চন্দ্র রায়ের বাবা রাম প্রশাদ ও মা শুভা রানী, রমিত্যা রায়ের বাবা কামিক্ষা রায় ও মা সাবিত্রী রাণী, প্রশান্ত কুমারের বাবা অমল চন্দ্র ও মা গীতা বালা, মোরছালিনের বাবা নুল আলম ও মা লিপি বেগম এবং মাসুম বিল্লাহর বাবা ফজলুল করিম ও মা মাহামুদা বেগম।
চেক বিতরন অন্ঠুানে সংসদ সদস্য মেজর(অবঃ) রানা মোঃ সোহেল বলেন নিহত পরিবার গুলোকে আয়বর্ধক সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
অপর দিকে জেলা প্রশাসক বলেন সরকারিভাবে যে সকল সাহার্য্য সহযোগীতার সুযোগ রয়েছে তা ধাপে ধাপে প্রদান করা হবে।
অনুষ্ঠানে নিহত পরিবারের সদস্যরা ইটভাটির মালিকের শাস্তি দাবি জানিয়ে ইটভাটির মালিকের নিকট হতে নিহত পরিবারদের ক্ষতিপুরন প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করে।উল্লেখঃ কুমিল্লার ওই ১৩ নিহত শ্রমিকের মরদেহ ঘটনার পর দিন সকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নীলফামারীর জলঢাকায় নিয়ে এসে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবারে কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
Discussion about this post