৭১ বাংলাদেশ প্রতিবেদক সৌদিআরবঃ সৌদিআরবে বিদেশি শ্রমিকদের কোনো কারণ ছাড়াই পাঠিয়ে দিচ্ছে সৌদি পুলিশ, বিভিন্ন সেক্টরে কাজের নিষেধাজ্ঞা বহাল হবার পর থেকে কাজ না পেয়ে দেশে ফেরত যেতে শুরু করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত দের সপ্তাহে, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর মাত্র ১১ দিনে সৌদিআরব থেকে ফিরেছেন ৬শ’ বাংলাদেশি। ফেরত যাওয়া এই কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের কাছে সব ধরনের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়াই তাঁদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে সৌদি পুলিশ। ফেরত আসা কর্মীদের মধ্যে যেমন রয়েছেন দীর্ঘদিন দেশটিতে অবস্থান করা, তেমনি রয়েছেন অতি সম্প্রতি যাওয়া বাংলাদেশিরাও। জানা গেছে, গত ১১ দিনে প্রায় ৬শ’ বাংলাদেশি দেশে ফিরে যাচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর ৮০ জন, ৩ অক্টোবর ১৪৪ জন ও ৪ অক্টোবর ফিরেছেন ১৭০ জন। এছাড়া এর মধ্যেই বিভিন্ন ফ্লাইটে ২শ’খানেক কর্মী দেশে ফিরেছেন।
৭ অক্টোবর ১শ’ জনের ফেরত যাওয়ার কথা রয়েছে। ফেরত যাওয়া কর্মীরা বলছেন, সামনে তাঁদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত। ধারদেনা করে বিদেশ যাওয়ায় অনেকে বাড়ি ফেরা নিয়েও দোটানায় রয়েছেন। তবে কি কারণে তাঁদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে এই ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
৪ অক্টোবর সৌদি থেকে ফেরত যাওয়া আফজাল টেলিফোন এ প্রতিবেদক’কে জানান, তিনি গত বছরের জুনে এলাকার এক ভাইয়ের মাধ্যমে সৌদি আরব যান। তাঁকে ইলেক্ট্রিকের কাজ দেয়ার কথা বলা হয়েছিলো। বলেছিলো, থাকা-খাওয়া খরচ বাদে তাঁর আয়-রোজগার হবে মাসে ৮০-৯০ হাজার টাকা। এই চিন্তা করে তিনি সাড়ে ৭ লাখ টাকা ধারদেনা করে সে দেশে পাড়ি জমান। কিন্তু দেশটিতে যাওয়ার পর প্রথম ৪ মাস কাটে বেকার জীবন। ওই সময় তিনি কোনরকম একবেলা-আধাবেলা খেয়ে দিন পার করেছেন। এরপর তাঁকে মরুভূমির একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ দেয়া হয়। সেখানে কাজ করেন ৪-৫ মাস। ওই সময় তিনি বাড়িতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকাও পাঠিয়ে ছিলেন। এরপর আবারো বেকার হয়ে পড়েন। কোম্পানি তাঁকে দিয়ে কাজ করালেও আর বেতন দেয়নি। এক সময় পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। এর মধ্যে পেট চালানো এবং থাকার জন্য মাঝে মাঝে দু’একদিন এদিক-সেদিক কাজ করেন। কিন্তু তাও নিয়মিত না। এই অবস্থায় গত ১৯শে সেপ্টেম্বর কাজে যাওয়ার সময় সকালে পুলিশ তাঁকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করে।
আমজাদ আরো জানান, তাঁর ভিসার মেয়াদ, বৈধ আকামাসহ সবই ছিলো। কিন্তু সেগুলো দেখালেও কোনো কাজ হয়নি বরং কাগজপত্র নিয়ে সফর জেলে পাঠিয়ে দেয় তাঁকে।
একই ফাইটে আসা কুমিল্লার আনোয়ারের একই অভিযোগ।
একই জেলার নাসির উদ্দিন বলেন, কপিলের সংগে তাঁর মতবিরোধ হওয়ায় তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। এরপর ২০-২৫ দিন জেলে কেটেছে তাঁর। তিনি বলেন, তাঁর কাছেও বৈধ কাগজপত্র ছিলো। নাসির অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজন সফর জেলে গেলেও তাঁদের সংগে কোনো কথা বলেনা।
এ দিকে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, নারীকর্মীদের সংগে গণহারে পুরুষকর্মী ফেরত আসা শুরু হয়েছে। শাহজালালের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারি পরিচালক তানভীর আহমেদ জানান, সৌদি থেকে ফেরত আসাদের মধ্যে ৬ বছর আগে যাওয়া লোকজন যেমন আছেন, তেমনি সম্প্রতি যাওয়া কর্মীরাও আছেন। তিনি বলেন, ফেরত আসা এসব কর্মী অভিযোগ করছেন, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে আসল কারণ দূতাবাস বলতে পারবে।