মোঃ ফয়সালঃ,চট্টগ্রাম নগরীর কাতালগঞ্জ বড় মসজিদ। মসজিদের পাশেই এক গম্বুজের হযরত কাতাল পীর শাহ (র.) দরগাহ। দরগাহের সামনের প্রবেশের মুখটি চকচকে মোজাইক দিয়ে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এর গায়ে বাংলা হরফে লেখা হয়েছে ‘হযরত কাতাল পীর শাহ (র.) দরগাহ। সৌজন্যে : কাতালগঞ্জ সমাজকল্যাণ পরিষদ।’ দরগাহের সামনে একটি গেট রয়েছে। এর ভেতরে কিছু নির্মাণসামগ্রীও রাখা হয়েছে। তাই তালা দেয়া হয়েছে। এতে অবশ্য দরবারে আগত ভক্ত–অনুসারীদের কোনো সমস্যা হয় না বলে জানা গেছে। কারণ দরগাহে সেজদা করা নিষেধ। তাই তারা গেটের বাইরে থেকেই পীরের দরবারে নিজেদের আর্জি পেশ করে চলে যান। কাতালগঞ্জ সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি এবং সহকারী মোতোয়াল্লি মো. এমরানুল হক বলেন, ‘দরগাহটি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। আমরা তা অনুসরণ করে ইট–সুড়কির তৈরি দরগাহটির সংস্কার করেছি। এর মূল কাঠামো এবং আকার আকৃতি বজায় রেখেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। আগামীতে দরগাহের সামনে কারুকার্যময় গেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’ ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য সহকারী মোতোয়াল্লি এমরানুল হক জানান, প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো এই মাজার শরীফ। কাতাল পীর শাহ (র.) পারস্য থেকে এদেশে এসে ইসলাম ধর্মপ্রচারে নিয়োজিত হন। কাছাকাছি সময়ে এখানে এসেছেন হযরত বদনা শাহ (র.), হযরত মিসকিন শাহ (র), হযরত বদর শাহ (র.), হযরত মোহসীন আওলিয়া (র.) প্রমুখ পীর–অলি। কাতাল পীর শাহ (র.)-এর নামানুসারে এই এলাকার নাম ‘কাতালগঞ্জ’ হয়েছে। প্রথম দিকে দরগাহের পাশেই ছিল একতলা একটি মসজিদ। পরে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয় মোতোয়াল্লি আলহাজ শামশুল আলম শামীমের পৃষ্ঠপোষকতায়। সরেজমিনে দেখা যায়, দরগাহের সামনেই রয়েছে একটি টিউবওয়েল। এর বয়সও প্রায় ৭০০ বছর পেরিয়েছে। শুরু থেকেই এটি এখানে রয়েছে। এই পানিকে পবিত্র জ্ঞান করে বিভিন্ন মনোবাসনা পূরণের আশায় ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সেই পানি পান করেন এবং কেউ কেউ তা সংগ্রহ করে নিয়ে যান বলে জানা গেছে। টিউবওয়েলের পানি নিতে আসেন পাঠানটুলি ,নাজির পুল , বারেক বিল্ডিং ,বাদাম তলি, চান্দগাঁও,সহ দূর–দূরান্তের মানুষ। অনেকে আবার সবার অজান্তে পানি সংগ্রহের জন্য নিরবেই রাতের বেলায় এসে পানি নিয়ে যান। এমরানুল হক জানান, এক সময়ে কাছাকাছি দূরত্বে টিউবওয়েলটি সরিয়ে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সেখানে তারা কোনো পানি না পাওয়ায় আবার আগের জায়গাতেই টিউবওয়েলটি স্থাপন করেন। এরপর থেকে আর এই টিউবওয়েলের পানি এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়নি। এই টিউবওয়েলের পানি নিয়ে আশেপাশের বাসা বাড়িতে সরবরাহ করেন জামাল নামে এক ব্যক্তি। এটিই তার জীবিকার উৎস। পানি পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে প্রতি মাসে তার ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন। মাজারের পাশে কয়েকটি পাইপে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা রয়েছে। এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা এখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন। এছাড়াও এলাকায় কখনো ওয়াসার পানির সরবরাহ বন্ধ থাকলে সবাই এখান থেকেই পানি সংগ্রহ করতে আসেন বলে জানান এমরানুল হক। জানাগেছে মহিলাদের জন্য সেখানে রয়েছে পৃথক ওযুখানা। দোতলা থেকে ৫তলা পর্যন্ত রয়েছে পুরুষদের নামাজের ব্যবস্থা। আর ছয়তলায় গড়ে তোলা হবে ইসলামি গবেষণা কেন্দ্র। মসজিদের একতলা থেকে ৫ তলা পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদে রয়েছেন দুজন ইমাম এবং দুইজন মুয়াজ্জিন। মসজিদের নিচতলায় দেয়ালের পাশে একটি ফলকে লেখা রয়েছে : ‘কাতালগঞ্জ বড় মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : জনাব আলহাজ শামশুল আলম শামীম মোতোয়াল্লী/ সাধারণ সম্পাদক। নির্মাণ ব্যবস্থাপনায় : জনাব আলহাজ মাহফুজুল হক, পরিচালক, ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট। মসজিদের পাশেই রয়েছে কবরস্থান। সেখান থেকে মসজিদ ভবনের পাশেই একটি পাকা পথ গিয়ে মিশেছে দোতলায়। জানাজার সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জানাজা শেষে সেই পথ ধরে আবার বেরিয়ে আসা যায়। এতে মসজিদের মূল ভবনে সাধারণ মুসল্লিদের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে বলে জানান সহকারী মোতোয়াল্লি মো. এমরানুল হক। দোতলা থেকে ছয় তলায় ওঠানামার জন্য এসকেলেটরের ব্যবস্থা রাথা হবে। আগামী বছরের মধ্যে পুরো মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।১২ আউলিয়ার দেশ নামে পরিচিত চট্টগ্রাম নগরী ।